ভালবাসায় দুর্বলতা
বাড়ি থেকে পছন্দ করে তোমার সাথে বিয়ে হলো। সবাই ভাবল মেয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্র পেয়েছে। বলবে নাই বা কেন তুমি শিক্ষিত মানুষ। অনেক পড়াশুনা করেছ তারপরে ভালো চাকরী করো। বয়স একটু তোমার বেশি আমার থেকে সেটা তবে সেরকম বেমানান লাগে নি আমার বাড়ির লোকের কাছে।
বিয়ের পর তোমার সাথে তোমার ঘরে এলাম। তোমার সাথে প্রথম কথার পরিচয় হল তোমার বাড়িতে। ভালই লাগলো। আস্তে আস্তে তোমার পরিবারকে আপন করতে লাগলাম আর পাঁচটা মেয়ের মতোই। তোমার সাথে প্রথম কথা বলে মনে হয়েছিল তুমি খুব বোঝদার। হবে নাই বা কেন, তুমিও তো আমাকে বলেছিলে তুমি আমার ভালো বন্ধু হবে।আমাকে একাধারে স্বামীর ভালবাসা যেমন দেবে ঠিক তেমনই বাবার মতো স্নেহ নজরে আগলে রাখবে। যে সকল মেয়ে বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয় নি তারা অবশ্যই তার প্রিয় মানুষের প্রতি বাবার ছায়া সবসময়ই দেখতে ভালবাসে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। জানলে তোমার কথা শুনে, তোমার জীবনের লড়াই করে উঠে আসার ইতিহাস জেনে তোমাকে আরও ভালবেসে ফেললাম। ভালবাসতে বাসতে আমার নিজের অস্তিত্বটাই হারিয়ে ফেললাম নিজের কাছে। তোমার সব কথাকে আমি এতো গুরুত্ব দিতাম যে আমার মন কি বলছে কি চাইছে সেদিকে খেয়াল দিতাম না। আসলে ভালবাসার সাথে তোমার প্রতি ছিল আমার অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা।
ভুল ভাঙল বছর দুয়েক পরে। তোমার কিছু কিছু ব্যাবহারের মধ্যে দিয়ে। আমি ভাবতাম আমার ভালোবাসা কে তুমি ভালবাসার চোখে দেখ, আমাকেও তুমি শ্রদ্ধা কর বিশ্বাস কর। দেখলাম না এখানে গলতি আছে। তুমি আমার ভালোবাসাকে আমার দুর্বলতা ভাবলে। তাই তাকে নিয়ে খেলা করতে শুরু করলে। বাচ্চাটা না হলে আমি বুঝতে পারতাম না তোমার এই মানসিকতাটা। তুমি দিন দিন আমার কাছে অপরিচিত হয়ে উঠছিলে। প্রতিবাদ করতে পারতাম না কারন আমি যে বড় অসহায় ছিলাম। তোমার অপমান হবে বলে বাপের বাড়িতে কিছু বলতে পারতাম না। আমি যে তোমাকে ভালবাসি তাহলে তোমার অপমান সহ্য করব কি করে।! আসতে আসতে আমার সহ্যের বাঁধ ভাঙল আমি সোচ্চার হলাম। আসতে আসতে আমার ভালোবাসা মুখ ফেরাতে থাকল তোমার থেকে। তোমাকে বোঝাতে লাগলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি তা বলে আমি দুর্বল নই। অর্থনৈতিক দিকে আমি স্বাবলম্বী ছিলাম না পড়তে পড়তে বিয়ে হয়েছিল তবে সৎ পথে রোজগার করে নিজের ভবিষ্যত গড়তে পারি সেটা তোমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। তুমি থমকে ছিলে কিছুটা হলেও। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা হারালেও মায়া হারায় নি তাই তো হাজার বার ডিভোর্স নেবার সিদ্ধান্ত নিলেও নিতে পারিনি।
আজ তোমার আমার মনোমালিন্যের কথা জগৎ সংসারের অনেকেই জানে। হয়তো হাসাহাসিও করে। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। বিয়ের পর আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। সবথেকে বড় অভিজ্ঞতা মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হয়ে বিয়ে করা উচিত। কারন এটুকু খুব ভালো করে বুঝেছি তোমরা যত টাকায় উপার্জন কর পাঁচ পয়সা তোমাদের কাছে চাইলে দিনের শেষে ভালবাসার ছোঁয়া দিয়েও জানতে চাইবে কেন নিলাম ঐ পয়সা টা। অনেকের কাছেই এটা তুচ্ছ ব্যাপার হতে পারে তবে আমার কাছে নয়। ভালবেসে নিজেকে সস্তা করে দেবার কোন মানে নেই। ভালবেসে দুর্বল হলে চলবে না। তাহলে নিজের সম্মান রক্ষা করা যাবে না। আর ভালবাসি বলে একতরফা শ্রদ্ধা করে সমস্ত অভিযোগ চেপে রাখার কোনও মানেই হয় না। তোমাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে আমরা দুর্বল নই—একথাখানি।
তুমি আমাকে গুরুত্ব দিলে তবে তুমি গুরুত্ব পাবে এটা তোমাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আজ তুমি তোমার সমস্ত দোষ স্বীকার করে আমার কাছে আরও নিবিড় হবার চেষ্টা কর আমি বুঝি কিন্তু তোমার সাথে আর একাত্ম হতে পারি না গো। আমার ভালোবাসা যে তোমার কাছে সম্মান পাই নি তাই। প্রথম জীবনে তুমি আমার ভালোবাসা কে দুর্বলতা ভেবে যেমন পাশে থেকেছো ঠিক তেমনই আজ তোমার বয়স হয়েছে, তোমার রক্তের তেজ কমেছে, তুমি একটা শেষ বয়সের অবলম্বন খুঁজছো, তোমার এই সমস্ত দুর্বলতা গুলো জেনে তোমার পাশে আছি। আমি ভালো করেই জানিএটাকে ভালবাসা বলেনা এটা একধরনের মায়া। একধরনের কর্তব্যবোধ এছাড়া আর কিছু না। ভালবাসা সে তো বহুদিন আগে তোমার হাতেই খুন হয়েছে। ভালবাসা সত্যি কাঁচের বাসন। বড় যত্ন করতে হয়। একবার ভেঙে গেলে যত সূক্ষ্মভাবেই জোরা লাগাও দাগ ঠিক থেকেই যায়। আর করনে অকারণে সে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এই লেখা কার কতখানি ভালো লাগবে জানি না শুধু বলব মেয়েদের স্বাবলম্বী করে বিয়ে দিন। মেয়েদের যথাযথ শিক্ষা দিন। বাপের বাড়িতে এসে কোনো অভিযোগ করলে মানিয়ে নিতে না বলে ঘটনার সত্যতা যাচাই করে পাশে থাকার ভরসা দিন। কথায় আছে কামড়াতে না পারলেও ফোঁস করতে ছেড়োনা।।💕💕
Comments
Post a Comment