ডিভোর্সী
আজ নয় নয় করে চার বছর হয়ে গেল রিমির ডিভোর্স হয়ে গেছে। তবু রিমির জীবনে সুখটা অধরায় রয়ে গেল। এই ডিভোর্সী জীবনটার জন্য কে দায়ী সেটাই বিচার্য!!!
রক্ষণশীল পরিবারের একমাত্র সুন্দরী, আদুরে মেয়ে হল রিমি। ফুল ফুটলে যেমন ভ্রমর আসে ঠিক তেমনই রিমির যৌবনেও এক আধটা ভ্রমর উঁকি দেয়, বয়স তখন অল্প ছিল তাই মনে দোলা লাগলেও চিরস্থায়ী হয় নি সেসব সম্পর্ক। যখন সে বাস্তবকে বুঝতে শিখেছে তখন ওদিক থেকে সরে এসেছে।
রিমি পড়াশোনাতে মোটামুটি ছিল। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে ভর্তি হয়। ফাইনাল ইয়ার তখন ওর বয়স 20/21 হবে। বাড়ি থেকে পাত্র দেখা শুরু করেছে। বিভিন্ন পাত্রের সন্ধান এলেও কিছু না কিছু কারনে ভেঙে যাচ্ছে সম্বন্ধ। রিমির মা-বাবা একরকম হতাশ হয়ে গেছে। এমন সময় তাদের কাছে একটি সম্বন্ধ আসে। কদিন পর দেখতে আসবে। এরপর একদিন রিমির মা আমাকে বলল ওর বিয়ের সব ঠিক হয়ে গেল। পাত্র ওদের পূর্ব পরিচিত মানে একটু দূর সম্পর্কের আত্মীয়। পাত্র পক্ষের সবার খুব পছন্দ হয়েছে, ওরা খুব শীঘ্রই বিয়ে দিতে চায়। রিমি আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ হয় না তবে ওকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি আর বুঝেছি খুবই সহজ সরল একটি মেয়ে। তাই ওর মাকে বললাম ছেলে সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ খবর নিতে।ওর মা তখন আনন্দে আছে বলে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, অত্যন্ত বিশ্বাসী হয়েই বলে সব ঠিকঠাক আছে রিমি খুব ভালো থাকবে। যথারীতি নির্দিষ্ট দিনে খুব জাঁকজমক করে বিয়ে হল রিমির। সবাই খুব খুশি। রিমি শ্বশুর বাড়ি গেল। মাস ছয়েকের মধ্যেই রিমি বুঝতে পারে ওর শ্বশুর বাড়ি ঠিকঠাক হয় নি। বাপের বাড়ি এসে বলার চেষ্টা করে টুকরো টুকরো কথা কিন্তু ওরা মেয়েকে বলে মানিয়ে নিতে। তার স্বামী তাকে স্বপ্ন দেখায় কলকাতায় ফ্ল্যাট কিনবে। তাই টাকা দরকার এই বলে তার গয়না গুলো নিয়ে বিক্রি করে এবং রেস-এর মাঠে দিয়ে আসে। আসতে আসতে রিমি বুঝতে পারে তার স্বামী কোনো চাকরি করে না। রেসের মাঠে যায়। মদ এবং অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। প্রথমে সে তার শ্বশুর শাশুড়ি কে এ প্রসঙ্গে বলতে যায় তখন দেখে ওরা সব জেনেই পরিকল্পিতভাবে ওর সাথে বিয়ে দিয়েছে। তাই ওখান থেকে কোনও সাহায্য পায় না। এর মধ্যেই সে প্রেগন্যান্ট হয়। ভাবে ওর স্বামী ঠিক হয়ে যাবে স্বামীও সেভাবেই ওকে স্বপ্ন দেখাতে থাকে। তাই বাপের বাড়িতে ঐ প্রসঙ্গে কিছু বলে না কারণ রিমি তখন এটুকুও বুঝেছে মেয়ের থেকে তখন সবাই জামাইকে বেশি বিশ্বাস করে। যাইহোক, রিমির শরীর দিন দিন খারাপ হতে থাকলে ডাক্তার দেখানোর দরকার পড়ে তখন ওর শাশুড়ি বলে বাপের বাড়ি থেকে ডাক্তার দেখাতে হবে। এটাই নিয়ম। এই সময় থেকেই রিমির বাবার মনে খটকা লাগে। তারা রিমির শ্বশুর বাড়ি যায় এবং ওকে নিয়ে আসে। এরপর থেকে শ্বশুর বাড়ি আর তেমন যোগাযোগ রাখে না। নির্দিষ্ট দিনে রিমি ছেলের জন্ম দেয়। নতুন অতিথি আসার আনন্দে সবাই খুশি হয়। কিন্তু ওর শ্বশুর বাড়ির কেউ আসে না। এরপর ওর স্বামী দেখতে আসে কিন্তু ওদের নিজের কাছে নিয়ে যাবার নাম করে না। ওই একদিন ওর স্বামী কে বলে সে এবার শ্বশুর বাড়ি যাবে। নিম রাজি হয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু ওখানে গিয়ে ও বিভিন্ন অত্যাচারের সন্মুক্ষীন হয় ওর ছেলেকে নিয়ে। তাই বাধ্য হয়ে বাপের বাড়িতে সব জানিয়ে বাপের বাড়ি ফিরে আসে। তারপর সবকথা খুলে বলে রিমি তার মা বাবা কে। দুপক্ষের আলোচনা বসে এবং ঠিক হয় ডিভোর্স নেবে মিউচুয়াল ভাবে। ছেলের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে রিমির স্বামী কিন্তু সে একজন মা তাই সে দায়িত্ব অস্বীকার করে না। ছেলেকে নিয়েই রিমি ডিভোর্স নেয়। রিমির প্রাপ্য জিনিস রিমিকে দিয়েছে ওর স্বামী কিন্তু সুখ-শান্তি কি ফিরিয়ে দিতে পারল!!!
আজ রিমির চার বছর ডিভোর্স হয়েছে। ওর বাবা বিয়ে দেবার জন্য পাত্র খুঁজে চলেছে। পাত্র মিলছে কিন্তু রিমির ছেলের দায়িত্ব কেউ নিতে চাইছে না, অথচ রিমি সেই সমস্ত পুরুষের সন্তানের দায়িত্ব নিতে চাইছে। রিমির দোষ রিমি সন্তানের মা। সে তার সন্তানকে সন্তানের বাবার মত অস্বীকার করতে পারে নি। সে আজ নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু ওর ফ্যামিলি ভাবে রিমি নিজে রোজগার করলে ওদের সম্মান নষ্ট হবে। ওরা সম্মান দেখে রিমির মন বোঝে না। রিমিরও যে স্বপ্ন আছে সেটা বোঝে না। আজ সে নিজের বাপের বাড়িতেই আছে বোঝা হয়ে।
আজ রিমির এ জীবনটার জন্য দায়ী কে???
আজ রিমির স্বামী সর্বশান্ত, সেই মেয়েটা যার সাথে ওর সম্পর্ক ছিল সেও ঘর বেঁধেছে অন্য ছেলের সাথে সব জেনেও রিমি আজও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে তার স্বামী তার কাছে ফিরে আসুক, ছেলেকে বুকে টেনে নিয়ে আবার নতুন করে সংসার শুরু করুক। কারন তার ছেলের যে কোনো দোষ নেই। ছেলে ও স্বামীর প্রতি কতটা ভালবাসা থাকলে এ ইচ্ছা হয় সেটা মনে হয় অনুভবকারীরাই বুঝতে পারবে। ঈশ্বর জানেন রিমির এই আশা পূর্ণ হবে কিনা! তবে আমি অন্তর থেকে কামনা করি ও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি রিমিকে সুখী করার জন্য।
কলমে: শ্রাবণী কর
Comments
Post a Comment