ছেলে - মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা ও সমাধানের কিছু কথা
আমার মতে বয়ঃসন্ধি কালে কি কি পরিবর্তন আসে জীবনে সে সম্পর্কে মা-বাবার আগে থেকে সন্তান কে সঠিক ভাবে বলে রাখা উচিত। এরফলে তারা এই পরিবর্তন গুলোকে খুব সহজভাবে নিতে পারবে।
এই সময় ছেলেদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে টেস্টোস্টেরন নামক হরমোনের জন্য আর মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টরন নামক দুটি হরমোনের জন্য। যদি ছেলে মেয়েদের এই সময় কি কি করা উচিত আর কি কি করা উচিত নয় সেটা যদি সঠিক ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তারা মানসিক চাপ, ভয়, অপরাধ বোধ এবং অপরাধ মূলক কাজ থেকে দূরে থাকতে পারবে।
ছেলেদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয় মোটামুটি 10-15 বছরের মধ্যে আর মেয়েদের 8-13 বছরের মধ্যে। তবে এর ব্যাতিক্রম হতে পারে। এই সময় প্রধানত তিন ধরনের পরিবর্তন নজরে আসে। যথা—শারীরিক, মানসিক ও আচরনের দিকে।
শারীরিক দিকে
***************
মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনে নজরে আসে এই সময় ওজন ও উচ্চতা বাড়ে, শরীর একটু ভারী হয় ও
হাড় মোটা দৃঢ় হয়।
আর ছেলেদের ক্ষেত্রে উচ্চতা ওজন বাড়ে, শরীরে দৃঢ়তা আসে, বুক কাঁধ এগুলো একটু চওড়া হয়, গলার স্বর মোটা হয় আর দাঁড়ি গোঁফ গজায়।
মানসিক দিকে
**************
এই সময় শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়। যেমন —এই সময় মনে আবেগ আসে বেশি করে
2 লজ্জা বোধ বেশি জাগ্রত হয়
3 যেকোনো অজানা বিষয়ে বা গোপনীয়তার প্রতি জানার আগ্রহ বাড়ে।
4 বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয়
5.মানসিক দিকে আস্তে আস্তে পরিপক্কতা পেতে থাকে।
6 সকলের ভালবাসা ও মনোযোগ পেতে চেষ্টা করে।
আচরণের দিকে
***********'*******
1মেজাজে রুক্ষতা আসে অনেক সময়।
2 ঘুমাতে চায় প্রচুর
3 কথাবার্তা অনেকটা বড় দের মত বলে অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্কদের মত।
4 সমস্ত কাজের জন্য প্রশংসা পাবার চেষ্টা করে।
5 অনেক সময় চুপচাপও হয়ে যেতে পারে।
6 সব কিছুতে যুক্তি খোঁজে।
যৌবনারম্ভে যে দৈহিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে সে ব্যাপারে আগে থেকে তাদের কে জানিয়ে না দিলে তাদের মধ্যে আচরণগত অস্বাভাবিক চলে আসতে পারে। তাই আগে থেকে মা-বাবার শিক্ষা দেওয়া উচিত।
বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে, 'যৌবনাগমনের কতদিন আগে এ শিক্ষা দেওয়া উচিত তা কতগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করবে। অনুসন্ধিৎসু এবং বুদ্ধি সম্পন্ন শিশুকে জড় প্রকৃতির শিশুর চেয়ে আগে এ শিক্ষা দিতে হবে। কখনো কোনো অবস্থাতেই শিশুর কৌতূহল অপরিতৃপ্ত রাখা উচিত হবে না। শিশু বয়সে যত ছোটই হোক, সে যদি জানতে চায় তার কৌতূহল মেটাতে হবে কিন্তু সে যদি স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কোনো প্রশ্ন না করে কুসংসর্গ থেকে খারাপভাবে কিছু জেনে ফেলে, সে দোষ নিবারণের জন্য 10 বছর বয়সের আগেই তাকে যৌনজীবনের ব্যাপারে শিক্ষা দিতে হবে। এমন ক্ষেত্রে গাছপালা বংশ বৃদ্ধি ও প্রাণীর প্রজনন সম্বন্ধে আলোচনার ভিতর দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে তার কৌতূহল মেটাতে হবে। এজন্য কোনো গুরুগম্ভীর ভূমিকার প্রয়োজন নেই। অতি সাধারণ ভাবে দৈনন্দিন যেকোনো ব্যাপারে মতোই এ প্রসঙ্গ তুলতে হবে। এজন্যই শিশুর কোনো প্রশ্নের উত্তর হিসেবে এ বিষয়ে আলোচনা করলেই ভালো হয়। '
তাই বলতে পারি সুস্থ সমাজ গঠন এবং বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যা দূর করার জন্য যৌনশিক্ষাকে মানুষের চরিত্র এবং আচরন গঠনের ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল শিক্ষার মতোই প্রাধান্য দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে মা-বাবার করণীয় —1 সন্তানদের আগে থেকে যৌনতা বিষয়ে সঠিক শিক্ষা দিয়ে রাখতে হবে।
2 ওদের সাথে বন্ধুত্ব পূর্ন আচরণ করতে হবে।
3 এসময় পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে
4 অতিরিক্ত শাসন বা জোরে কথা বলা যাবে না।
5 কাদের সাথে মেলামেশা করছে লক্ষ্য করতে হবে
6 অযথা টাকা পয়সা দেওয়া যাবে না। এর মূল্য বোঝাতে হবে।
7 ভালবাসা ও বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ দিয়ে ওদের ভুল টা ভাঙাতে হবে।
8 ওদের কথার গুরুত্ব দিতে হবে।
9.যুক্তি দিয়ে আলোচনা করতে হবে।
বয়ঃসন্ধিকালে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক আর এগুলো দেখে অনেকেই মনোবিদের কাছে নিয়ে যেতে বলেন। নিশ্চয়ই মনোবিদরা অভিজ্ঞ কিন্তু মা-বাবার কাছেই যে সন্তান বেশিরভাগ সময় থাকে তারাই এদের আচরণকে ভালভাবে অনুভব করতে পারেন। তাই বলব এক্ষেত্রে আপনার উপরেও মনোবিদ. কিছুটা নির্ভরশীল কারন সঠিক ভাবে কি কি পরিবর্তন এসেছে বলতে পারলে তবেই তিনি তার ভিত্তিতেই এগুবেন। তাই বলছি আপনারা সচেতন হন অর্থাৎ মা-বাবা যতবেশি সচেতন হবেন ছেলে মেয়েরা ততবেশি এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে পারে।
মা-বাবাদের বলছি আপনারা আপনাদের এইসময়কার অনুভূতি গুলি চিন্তা করুন সেই ভাবে ওদের সাথে মিশুন।
যা গোপন যা নিষিদ্ধ তা জানার কৌতুহল আমাদের সবার একথা স্বীকার করতেই হবে।
আমি আমার অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করলাম। আপনাদের সাথে মিলতেও পারে আবার নাও পারে। তবে ভালো লাগলে আমার ভালো লাগবে। সকলে ভালো থাকবেন ।
কলমে:শ্রাবণী কর ।
Comments
Post a Comment