কিসের ভিত্তিতে ঠিক হয় ছেলে হবে না মেয়ে


আর সহ্য করতে পারছি না। এই শিক্ষিত মূর্খ মানুষ গুলো কে আর ভালো লাগছে না ।ঘটনা জেনে আপনারাই বলুন আর সহ্য করা উচিত কিনা!
সোমার সাথে অরুনের বাড়ি থেকে দেখাশোনা করে বিয়ে হয়েছে আজ পাঁচ বছর হল। সোমা দেখতে শুনতে সুন্দরী, গ্র্যাজুয়েট এই সব দেখেই ওকে পছন্দ করে অরুনের মা, বাবা।।  বিয়ের পর প্রথম এক বছর খুব আনন্দেই এই কাটায়। তারপর সোমা প্রেগনেন্ট হয়। বাড়িতে খুশির আমেজ সোমাকে সবাই খুব কেয়ার করে সাবধানে রাখে। সোমাও খুব খুশি মনে মনে ঈশ্বর কে ধন্যবাদ জানাই এরকম একটা ভালো সংসার পাবার জন্য। বাড়িতে সবাই বলতে থাকে ছেলে মেয়ে যাইহোক তাতেই তারা খুশি। সবই ঈশ্বরের দান মাথায় হাত ঠেকায় ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে শাশুড়ি মা এই বলে। আস্তে আস্তে সোমার পেট বড় হতে থাকে। গড়ন দেখে আত্মীয় স্বজন বিচার করতে থাকে ছেলে হবে না মেয়ে, সিজার হবে না নরমাল এইসব। যতদিন এগিয়ে আসে সোমা একটু একটু আনন্দ মিশ্রিত ভয় পেতে থাকে। যাইহোক, দশমাস দশদিন পার করে সোমা তার সন্তান কে নিয়ে এল সুস্থ সবলভাবে। সুন্দর ফুটফুটে একটি মেয়ে সবাই খুব খুশি।  নির্দিষ্ট দিনে খুশিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে এল। আসতে আসতে বছর পার হল। খুশি টলমল পায়ে হাঁটতে শিখেছে, আদুরে ভাবে কথা বলতে শিখেছে সবই আনন্দে হচ্ছে। ঠিক দেড় বছরের মাথায় সোমা আবার প্রেগন্যান্ট হয়। এবার অরুণ একটু বেশি বিশ্বাস নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত করেই বলে এবার আমাদের ছেলেই হবে। সোমা আলত করে খুশির হাসি হাসে। আসতে আসতে এবার বাড়িতে ছেলে হবার আলোচনায় হতে থাকে। অরুনের মায়ের যুক্তি সোমা বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে প্রথম তাই ওটা মেয়ে হয়েছে এবার আমাদের জিনের দিক থেকে ওর ছেলে হবে। অরুণ ও অরুনের বাবা সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছে কিন্তু এ যুক্তির কোনও বিরোধিতা করল না। বরং মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। সোমার ভালোই লাগছে ও জানে ছেলে মেয়ে যাইহোক ওর ভয় নেই। এভাবে চলতে চলতেই জন্ম নিল দ্বিতীয় সন্তান সুন্দর একটি মেয়ে।
না এবারে আর অতখানি আনন্দ উল্লাস নেই। সোমা বাড়ি এল কিন্তু আগের মত অত আর যত্ন নেই। অরুণও আর সেভাবে বাচ্চার কাছে আসে না। সোমা ভাবে কি করেছে ও, কেন এমন ব্যবহার করছে। একদিন সোমা অরুণ কে জিজ্ঞেস করল তুমি খুশি হও নি? অরুণ উত্তর দিল খুব আশা করেছিলাম ছেলে হবে। সোমা বলে তাতে কি আছে, ঈশ্বর ভালো বুঝেই দিয়েছেন, না, আজ আর অরুণ সোমার সাথে গলা মেলায় না। আসতে আসতে একবছর পার হল। অরুণ সোমাকে আবার সন্তান নেবার জন্য বলে। সোমা রাজি হয় না। অরুণ অশান্তি করতে থাকে। সোমা তার শাশুড়ি মাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওদের অশান্তির কারণ। এবার উনি একটু কঠিন স্বরেই বলেন বংশধর দরকার। সোমা একটু অবাক হয় ভাবে শাশুড়ি এমনই বলছে ওকে ভয় দেখানোর জন্য কিন্তু পরে বুঝতে পারে ওর চিন্তা ভাবনা ভুল। ওরা সত্যি বংশধর পাবার জন্য মরিয়া। মেয়েরা বংশধর নয় ওদের কাছে। সোমা আসতে আসতে ফ্যামিলির কাছে অসহ্য হয়ে গেছে। সোমা কোনও যুক্তিতে বোঝাতে পারে না আবার সন্তান নিলেই যে ছেলে হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ওর কথা কেউ শোনে না। ওর উপর সকলের রাগ। মেয়ে হবার জন্য সবাই ওকেই দোষারোপ করতে থাকে। আসতে আসতে ওর কাছে এ বাড়িতে থাকা কষ্ট দায়ক হয়ে ওঠে। অনেকবার ভেবেছে চলে যাবে কিন্তু সন্তানের কথা ভেবে যায় নি। কষ্ট, যন্ত্রণা, বাক্যবান সহ্য করে সে ওখানে থাকে। এখন তার রূপ, আনন্দ সবকিছুতেই ভাটার ছাপ পড়েছে।
হঠাৎ করেই একদিন সোমার বান্ধবী লতার সাথে দেখা হয়। সোমা পুরানো বান্ধবীকে পেয়ে খুব আনন্দ পায়। দুজনেই মেয়ের স্কুলে এসেছিল আর সেখানেই দেখা। ফোন নাম্বার নেয়। দুজনেই দুজনের ফ্যামিলির খবর নেয়া দেয়া করে। লতা বলে ওর একটাই সন্তান রিমি। সোমাও বলে ওর দুই মেয়ে।অনেক কথোপকথনের পরে দুজনে বাড়ি ফেরে। এরপর থেকে ওদের স্কুলে দেখা হয় ফলে আবার বন্ধুত্ব জমে ওঠে। লতা খেয়াল করে সোমা আর আগের মতো প্রানোচ্ছল নেই। মাঝে মাঝে চিন্তাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কারন বুঝতে পারে না। সোমাও বলতে পারে না। সোমা একদিন লতাকে জিজ্ঞেস করে ওর মেয়ে সন্তান বলে ওর বর কিছু বলে কিনা! লতা বুদ্ধিমান মেয়ে সে এই প্রশ্ন শুনে বুঝতে পারে সোমার পরিবর্তনের কারণ। লতা বলে না। এরপরই লতা বলে বলবে কেন মেয়ে সন্তান হবার জন্য তো দায় মেয়েদের নয়। এর দায় তো ওদের। সোমা জানতে চাই চাই কি করে? লতা সাইন্সের মেয়ে। বায়োলজি নিয়ে পড়েছে সে সহজ সরল করে সবটা বুঝিয়ে বলে।মেয়েদের ডিম্বানু শুধুই  'x'ক্রোমোজম দেয় আর ছেলেদের শুক্রানু' x'ও ' y' দুটো ক্রোমোজম উৎপন্ন করে। যখন ছেলেদের 'x' ক্রোমোজম উৎপন্ন হয় তখন মেয়ে হয় আর যখন 'ক্রোমোজম y' ক্রোমোজম উৎপন্ন হয় তখন ছেলে হয়। এরপর কান্নায় ভেঙে পড়ে তখন সোমা বলে তার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি সবাই শিক্ষিত তবু তারা এই মেয়ে হবার জন্য সোমাকে দায়ী করছে। তার স্বামী সাইন্স নিয়েই পড়েছে সেই বেশি করে দোষারোপ করছে আর তার মা - বাবা সাপোর্ট করছে। লতা বলে সে কথা বলবে কিনা ওর শ্বশুর বাড়ির লোকের সাথে সোমা বারণকরে। বলে সে এবার বলবে। অরুণ রাতের বেলা যখন সোমাকে আক্রমণ করল ঠিক তখনই সে বলল লতার কথা গুলো। অরুণ সহ্য করতে পারল না সোমাকে মারল। অকথ্য ভাষা বলতে লাগল। সোমার শাশুড়ি বলে উঠলো ঘর থেকে বের করে দেবার কথা। সোমার কথা কেউ শুনলো না।
সোমাকে দুটো মেয়েকে দিয়ে পথে বার করে দিয়েছে বর্তমানে অরুণ অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে থাকে। এখনও বিয়ে করে নি। সোমাকে মিউচুয়াল ডিভোর্স নিতে বলেছে অরুণ। তাকে টাকা পয়সা দিয়ে দেবে। লতা বারবার সোমাকে এর প্রতিবাদ করতে বলেছে আইনের মাধ্যমে কিন্তু সোমা যায় নি। কারন অরুণ সোমার প্রথম ভালবাসা তার সন্তানের বাবা তাই সে ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
এবার আপনারাই বলুন বিনা কারণে এই অত্যাচারে মেয়েদের আর কতদিন অত্যাচারিত হতে হবে। আজ অরুণের মাও জানে না মেয়ে হবার জন্য মেয়েরা দায়ী নয় জানলে কি সে পারত এই ভাবে অত্যাচার করতে সোমার উপর। একটা সুস্থ, সুন্দর সংসার গড়ে তোলার জন্য মেয়েদের আগে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করা দরকার। এই দিকটিকে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিস্কার করে দেওয়া খুব দরকার। নাহলে সমাজ পিছিয়েই থাকবে।

মেয়েদের উপর অত্যাচারের একটি দিক শুধু তুলে ধরার চেষ্টা করলাম যেটার জন্য মেয়েরা কোনো অংশেই দায়ী নয়।
কলমে: শ্রাবণী কর।

Comments

Popular posts from this blog

অবৈধ

টেলিপ্যাথি

বিশ্বাসঘাতকের কাছে ম্যাসেজ......